সিভি (Curriculum Vitae), যার অর্থ “জীবনের ধারাবাহিকতা”, একজন ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত দক্ষতা এবং এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজের সংক্ষিপ্তসার। এটি সাধারণত দুই পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং চাকরির আবেদনের সময় ব্যবহৃত হয়। কর্পোরেট জগতে, সিভি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে অ্যাকাডেমিক সিভি গবেষণাগত অর্জনে মনোযোগ দেয়। সিভি তৈরির সময় আমাদের অবশ্যই কিছু ব্যাপার খেয়াল রাখা উচিত যেমনঃ- স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং ত্রুটিমুক্ত রাখা; আবেদনকৃত পদের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী তৈরি করা; আকর্ষণীয়ভাবে ফরম্যাট করা এবং পরিশেষে জমা দেওয়ার আগে প্রুফরিড করা ইত্যাদি।
সিভিতে যা যা থাকা জরুরীঃ
একটি সিভি (CV) আপনার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার একটি সংক্ষিপ্তসার যা চাকরির আবেদনের সময় ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু অংশ পরিবর্তনশীল হলেও, কিছু বিষয় সকল সিভির জন্য অপরিবর্তনীয়।
অপরিবর্তনীয় বিষয়গুলি হলঃ
- নাম ও ঠিকানা: স্পষ্টভাবে আপনার পূর্ণ নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং ইমেইল ঠিকানা উল্লেখ করুন।
- অবজেক্টিভ: এখানে সংক্ষেপে আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য এবং আবেদনকৃত পদে আপনার আগ্রহের কথা লিখুন।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: আপনার সর্বোচ্চ ডিগ্রী থেকে শুরু করে সকল শিক্ষাগত যোগ্যতা ক্রম অনুসারে উল্লেখ করুন।
- কাজের অভিজ্ঞতা: সাম্প্রতিকতম চাকরি থেকে শুরু করে সকল পূর্ববর্তী চাকরির অভিজ্ঞতা লিখুন।
- দক্ষতা: আপনার প্রযুক্তিগত, ভাষাগত এবং অন্যান্য দক্ষতা তুলে ধরুন।
- রেফারেন্স: প্রয়োজন হলে, আপনার পূর্ববর্তী কর্মকর্তা বা শিক্ষকদের নাম এবং যোগাযোগের তথ্য লিখুন।
উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও, আপনি নিম্নলিখিত বিষয়গুলিও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন:
- পুরষ্কার ও সম্মাননা: আপনার কোন পুরষ্কার বা সম্মাননা পেয়ে থাকলে তা উল্লেখ করুন।
- প্রকাশনা: আপনার কোন গবেষণাপত্র বা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়ে থাকলে তা উল্লেখ করুন।
- স্বেচ্ছাসেবক কাজ: আপনার কোন স্বেচ্ছাসেবক কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তা উল্লেখ করুন।
সিভি ফরম্যাটঃ
একটি আকর্ষণীয় এবং পঠনযোগ্য সিভি তৈরির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করুন:
- পাতা সংখ্যা: অধিকাংশ চাকরির জন্য ১ – ২ পেইজের সিভি যথেষ্ট।
- পেইজ সাইজ: A4 সাইজের পেইজ ব্যবহার করুন।
- ফন্ট: Arial, Times New Roman বা Calibri ফন্ট ব্যবহার করুন।
- ফন্টের সাইজ: ১১/১২ ফন্টের সাইজ বেছে নিন।
- ফন্টের রঙ: ১ – ২ ধরনের ফন্ট কালারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুন।
- সাবহেডিং: সিভির অংশগুলোকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে ১৪ – ১৬ ফন্ট সাইজের সাবহেডিং ব্যবহার করুন।
- বুলেট পয়েন্ট: পড়ার সুবিধার জন্য বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে সারাংশের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।
- লাইন স্পেসিং: দুই লাইনের মধ্যে যথেষ্ট স্পেসিং বজায় রাখুন।
- ডিজাইন: বিশেষ কোন দরকার ছাড়া সিভির ডিজাইনে বৈচিত্র্য নিয়ে আসা থেকে বিরত থাকুন। নিয়োগদাতার কাছে ডিজাইন দৃষ্টিকটু লাগলে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা বেশি।
সিভি ভালো করার উপায়:
আপনার সিভি আপডেট এবং উন্নত রাখার জন্য:
- দক্ষতা অর্জন: আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের সাথে সম্পর্কিত দক্ষতা অর্জনে সময় বিনিয়োগ করুন। নতুন দক্ষতা অর্জনের পর আপনার সিভি আপডেট করতে ভুলবেন না।
- অগ্রগতি ট্র্যাকিং: আপনি যদি কোন কাজের সাথে যুক্ত থাকেন, আপনার অগ্রগতি ট্র্যাক করুন। এটি আপনাকে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে সাহায্য করবে।
- নিয়মিত রিভিউ: নিয়মিতভাবে আপনার সিভি পর্যালোচনা করুন এবং কোন অংশে ঘাটতি থাকলে সেগুলো উন্নত করুন।
- পৃথক সিভি: প্রতিটি চাকরি এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য একই সিভি ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আপনার সিভি তৈরি করুন।
- টেমপ্লেট ব্যবহার: ইন্টারনেটে বিভিন্ন সিভি টেমপ্লেট পাওয়া যায়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে পরিবর্তন করে এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
একাডেমিক সিভি কি?
একাডেমিক সিভি হলো একটি বিস্তারিত ডকুমেন্ট যা উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, এমফিল, পিএইচডি ইত্যাদিতে আবেদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এটিতে একজন ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, গবেষণা অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা, পুরস্কার, সম্মাননা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে।
একাডেমিক সিভির দৈর্ঘ্য তথ্যের পরিমাণের উপর নির্ভর করে ২ থেকে ১০ পৃষ্ঠা হতে পারে। এ ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা নেই।
একাডেমিক সিভির উদ্দেশ্য হলো একজন ব্যক্তির একাডেমিক অর্জন এবং গবেষণা সম্ভাবনা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট এবং বিস্তারিত ধারণা প্রদান করা। এটি নির্বাচক কমিটিকে একজন আবেদনকারীর যোগ্যতা মূল্যায়ন করতে এবং তাদের প্রোগ্রামের জন্য উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।
একাডেমিক সিভি লিখার নিয়মঃ-
পরিচয়:
- নাম
- ইমেইল (ভার্সিটি প্রদত্ত)
- গুগল স্কলার/রিসার্চগেট প্রোফাইল (যদি থাকে)
প্রকাশনা:
- জার্নাল/কনফারেন্সে প্রকাশিত আর্টিকেল
- রিসার্চ বিষয়ের বুলেট পয়েন্ট
- কীওয়ার্ড ব্যবহার
কাজের অভিজ্ঞতা:
- স্টাডি রিলেটেড জব অভিজ্ঞতা
- টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ (যদি থাকে)
- ভূমিকার বুলেট পয়েন্ট
বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প:
- উল্লেখযোগ্য প্রকল্প (যেমন ফাইনাল ইয়ার প্রজেক্ট)
- ভূমিকার বুলেট পয়েন্ট
আগ্রহ (ঐচ্ছিক):
- বিষয়ের লিস্ট (আবেদনকৃত বিষয় ও রিলেটেড বিষয়)
পুরষ্কার ও সম্মাননা (ঐচ্ছিক):
- প্রাপ্ত পুরষ্কার ও সম্মাননার তালিকা
দক্ষতা (ঐচ্ছিক):
- প্রোগ্রামিং ভাষা, প্রযুক্তি ইত্যাদির দক্ষতা
ভাষা দক্ষতা (ঐচ্ছিক):
- আইএলটিএস স্কোর (যদি ভালো হয়)
সিজিপিএ:
- ভালো (>3) হলে উল্লেখ করুন
এসএসসি, এইচএসসি:
- সার্টিফিকেট/ট্রান্সক্রিপ্ট (যদি প্রয়োজন হয়)
প্রাসঙ্গিক কোর্স:
- মাস্টার্সের প্রিরিকুইজিট কোর্স
- অনলাইন কোর্স (যদি থাকে)
রেফারী:
- দুইজন প্রফেসরের নাম ও ইমেইল (যাদের থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার নিবেন)
সিভি লেখার জন্য ল্যাটেক্স ব্যবহার:
ওয়ার্ড ছাড়াও, ল্যাটেক্স (Texstudio, Miktex, Overleaf) ব্যবহার করে আপনার সিভিকে আরও আকর্ষণীয় এবং পরিপাটি করে তুলতে পারেন। একাডেমিক ক্ষেত্রে ল্যাটেক্সের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। এর সুবিধা হল:
- পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ: আপনার সিভির প্রতিটি মিলিমিটারের উপর আপনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
- লাইন স্পেসিং: ওয়ার্ডের মত লাইন স্পেসিং নিয়ে ঝামেলা হবে না।
ল্যাটেক্সের অনলাইন এডিটর “ওভারলিফ” ব্যবহার করতে পারেন:
ওভারলিফে অনেক সুন্দর সিভি টেমপ্লেট পাবেন:
একটি টেমপ্লেট বেছে নিয়ে “Open Template” করুন।
- বাম পাশের এডিটরে কোড পরিবর্তন করুন।
- ডান পাশে “Compile” করে পরিবর্তনগুলি দেখুন।
ল্যাটেক্স ব্যবহার করে সিভি তৈরি করতে কিছুটা সময় এবং ধৈর্য্য লাগে। তবে, এর ফলাফল অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং পেশাদারী হবে।