উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও লাভের কথা বললে তা শেষ হবে না। একেকজনের কাছে বিষয়টি একেকরকম মনে হতে পারে। তবে মোটাদাগে বললে কিছু দৃশ্যমান লাভ খুব সহজেই বলা যায়:

  1. জ্ঞান আহরণ ও শেয়ারিং: আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে বিশ্বমানের কিছু করা তুলনামূলক কঠিন। এর মূল কারণ, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা জ্ঞান আহরণ ও চর্চার জন্য যথাযথ, ভালো ও সহজলভ্য রিসোর্স পান না। যেমন ধরুন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে একই কয়েকটি বই বারবার পড়েছেন যা বহু বছর ধরে বাজারে উপলব্ধ। এর বাইরে পরীক্ষায় আসে না এবং আপনারও পড়ার আগ্রহ জন্মায় না। থিসিস লেখার সময় হয়তো নিজের ফিল্ডের কাজ খুঁজতে গিয়ে লক্ষ্য করেছেন যে ইন্টারনেটের লিঙ্ক ও ওপেন অ্যাক্সেস পেপার ছাড়া বাকী পেপারের অ্যাক্সেস পান না। পেলেও আপনার বিশ্ববিদ্যালয় যা সামান্য কিছু অ্যাক্সেস দিয়েছে সেই প্রকাশকদের প্রকাশনা বা শ্যাডো লাইব্রেরি থেকে চুরি করা পেপারই পড়তে পেরেছেন। অথচ উন্নত দেশের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালো প্রকাশকদের প্রকাশনাগুলো ইনস্টিটিউশনাল অ্যাক্সেসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ইমেইল আইডি দিয়ে লগইন করে ফ্রিতে অ্যাক্সেস করার সুযোগ দেওয়া হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন বিষয়ে সবথেকে আপডেটেড পাবলিকেশনগুলো সহজেই পড়তে পারেন। অথচ বাংলাদেশে এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা একটি প্রকাশকেরও অ্যাক্সেস শিক্ষার্থীদের দেয় না। সুতরাং এতক্ষণে বুঝতেই পারছেন আপডেটেড জ্ঞান জানার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন পিছিয়ে পড়ছে আর কেন আপনার বাইরে পড়তে যাওয়াটা দরকার।
  2. আপডেটেড গবেষণা ও যন্ত্রপাতির অ্যাক্সেস: জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি সেই সম্পর্কিত জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এসব প্র্যাকটিক্যাল ইমপ্লিমেন্টেশনের জন্য প্রয়োজন ভালো মেশিনের সেটআপ, ভালো টেস্টিং ডিভাইস, ভালো ক্যারেক্টারাইজেশন টেকনিক, এক্সপার্ট কমিউনিটি, ভালো সফটওয়্যার ইত্যাদি। এসব জিনিস খুবই দামি এবং চালানোর জন্য জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন হয় বলে আমাদের মতো দেশে এসবের অ্যাক্সেস মোটামুটি নেই বললেই চলে কিংবা খুবই কম পরিমাণে রয়েছে। এছাড়াও কোন একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে বিশেষজ্ঞ মানুষজন অথবা কমিউনিটির লোকজনের সাথে আলোচনা করাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর। বাইরের দেশের প্রফেসররা সাধারণত প্রচুর পরিমাণে পড়াশোনা ও প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান রাখার কারণে এসব বিষয়ে এগিয়ে থাকেন। যা আপনাকে গবেষণার সময় ও শ্রম দুটোই বাঁচাতে সহায়তা করে। তাই আপনি বাইরে পড়তে গেলে আপনার সুপারভাইজার কিংবা শিক্ষক থেকে যে পরিমাণ গবেষণা সম্পর্কিত জ্ঞান পাবেন তা দেশে পাওয়া কিছুটা কঠিন।
  3. উন্নত জীবনযাত্রা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি: বাইরের দেশে নিরাপত্তা, ভেজালহীন খাবার, সহজলভ্য অ্যাক্সেস, পরিচ্ছন্ন জনপদ, ট্রাফিক জ্যাম না থাকা, আধুনিক প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয় সবসময়ই আমাদেরকে আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের মতো দেশে এসব জিনিসের ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার অ্যাক্সেস পাওয়াটা সাধারণ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সহজলভ্য নয়। অথচ এসব বিষয় উন্নত দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তাছাড়া আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতেও কোন একজন শিক্ষার্থী বাইরে পড়তে গেলে তাকে ভালো চোখে দেখা হয় এবং বাকী শিক্ষার্থীদের চেয়ে বাইরে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের আলাদা করে গুরুত্ব ও সম্মান দেওয়া হয়।
  4. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি: দেশে চাকরির বাজার ভালো না হওয়ায় খুব অল্প বেতনের চাকরির জন্যও অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। এছাড়া চাকরিতে লবিং, অতিরিক্ত চাপ, অপ্রাসঙ্গিক ফিল্ডের চাকরি, কম বেতন, বেতন আটকে রাখা এসব তো রয়েছেই। বাইরে পড়তে গেলে দেখা যায় স্কলারশিপ ম্যানেজ করতে পারলে তো ফিন্যান্সিয়াল দিক নিয়ে কোন দুশ্চিন্তাই করতে হয় না আর যদি কম ফান্ডিংয়ে ও আসা যায় তাতেও পার্ট টাইম ও অন্যান্য বিষয় দিয়ে কোনরকম ছাত্র জীবনটা পার করে দিতে পারলে চাকরি জীবনে অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা অনেকটা কমে যায়। মোটাদাগে, ফিন্যান্সিয়াল স্টেবিলিটি র জন্য বাইরে পড়তে যাওয়াটা অনেক ক্ষেত্রেই লাভজনক।
  5. ভালো ক্যারিয়ার: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্যই থাকে ভালো একটি ক্যারিয়ার। শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে পড়াশোনা করে দেশে ফিরে ভালো কোন জায়গায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পান কিংবা বাইরের কোন দেশে ভালো কোন জায়গায় ভালো স্যালারিতে চাকরিতে যোগ দেন। এছাড়া যাদের টার্গেট থাকে যে শিক্ষক হবেন তারাও বাইরের দেশ থেকে ভালো ডিগ্রি নিয়ে এসে দেশে ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি পজিশন অ্যাচিভ করে নেন বা প্রমোশন পান। এর বাইরেও গবেষণা নিয়ে যাদের প্যাশন আছে তারা দেখা যায় বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পোস্ট ডক পজিশনের জন্য ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় ও রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে সুযোগ করে নেন।